আপনি কি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান? তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য

সফল ফ্রিল্যান্সার
সফল ফ্রিল্যান্সার

আপনি কি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান?

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছুটা যেনে থাকেন এবং আপনার আগ্রহ রয়েছে তাহলে নিশ্চয় সফল একজন ফ্রিল্যানার হতে চাইবেন। কেননা ফ্রিল্যান্সিং করে সবাই সফল না এবং সবাই সফল হতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা। নিজের দক্ষতা, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে স্বাধীনভাবে অনলাইন থেকে আয় করাই হল ফ্রিল্যান্সিং।

তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়ঃ

১। রিসার্চ করুন (গবেষণা):
কোন কিছু করার পূর্বে এই বিষয়ে আমি রিসার্চ করি সর্ব প্রথমে। এবং এই ডিজিটাল যুগে রিসার্চ করা অনেক সহজ। ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে অনেক সময়, শ্রম এবং মেধা খরচ করতে হবে। তাই যেখানে আপনার এত মূল্যবান সময়, মেধা আর শ্রম বিনিয়োগ করবেন তা জেনে শুনে ভাল করে আগানো হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রিসার্চ করলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহায়তা করবেন।

আপনি হয়ত ছাত্র, পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন বা আপনি একজন চাকুরীজীবী, চাকুরীর পাশাপাশি এমনকি চাকুরী ছেড়ে অনেকে শুরু করতে চায়। এই জন্যই আমি রিসার্চটাকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছি। এই বিষয়ে রিসার্চ করলে আপনি জানতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং করে কি আসলেই টাকা আয় করা যায়? ফ্রিল্যান্সিং এ সফল কারা, এই পেশার ভবিষ্যত কেমন? ফ্রিল্যান্সিং করতে যে যোগ্যতা লাগে তা আপনার আছে কিনা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

২। প্রথমিক দুটি কাজ নির্বাচন করুনঃ
আমি ধরে নিলাম আপনি রিসার্চ করে সব কিছু জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন। এখন আপনি হয়ত খুজছেন ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজ করলে দ্রুত সফল হওয়া যায় এবং ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজে সবচেয়ে বেশি আয় করা যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক চিন্তা যা নতুনদের মনে প্রশ্ন জাগে। তার আগে আমাকে বলুন কোন কাজ করতে আপনার সবচেয়ে ভাল লাগে বা কেমন ধরণের কাজ আপনি ভাল ভাবে রপ্ত করতে পারবেন? এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কেননা আপনি অনেক টাকা আয়ের কথা শুনে হয়ত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট) পছন্দ করে নিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন কোডিং করার পর আপনার আর ভাল লাগে না, অনেক বিরক্ত লাগে, এমন কি কোডিং এর অনেক কিছু বুঝতে আপনার সমস্যা হয়। তাহলে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট) আপনার জন্য না। আবার ডিজাইন দেখে দেখে ভালই করতে পারেন কিন্তু যখনই নিজে থেকে একটা ইউনিক ডিজাইন করতে বলা হয় আপনার মাথা আর কাজ করে না। তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন আপনার জন্য না বলা যায়।

তাই এখানেও আপনি সময় নিয়ে রিসার্চ করুন যেমনঃ

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট) কি? এখানে কি কি কাজ করতে হয়।
ওয়েব ডিজাইন (ওয়েব ডিজাইন) কি? এখানে কি কি কাজ রয়েছে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন (গ্রাফিক্স ডিজাইন) কি? গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে কি কি শিখতে হবে।
ইন্টারনেট মার্কেটিং (ইন্টারনেট বিপণন) কি, ডিজিটাল মার্কেটিং (প্রযুক্তিমূলক বাজারজাত) কি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (সামাজিক মিডিয়া মার্কেটিং) কি এবং এদের বিস্তারিত ধারনা।
এফিলিয়েট মার্কেটিং (অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং) কি এবং কিভাবে করতে হয়।
এসইও (এসইও – সন্ধান যন্ত্র নিখুতকরন) কি এবং এসইও কাজের বিস্তারিত। ইত্যাদি আরো অনেক কাজ রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজের চাহিদা রয়েছে এমন একটি কাজ নির্বাচন করুন যা আপনার করতে ভাল লাগে এবং আরেকটি নির্বাচন করুন যা আপনি করতে পারবেন বলে মনে হয়েছে আপনার রিসার্চ থেকে।

৩। ফাইনাল কাজ নির্বাচন করুনঃ
এখন আপনার নির্বাচন করা দুটি কাজ ২ সপ্তাহ করে ২টির জন্য ৪ সপ্তাহ মানে ১ মাস শেখার জন্য এবং জানার জন্য সময় দিন। এখানে প্রথম কাজটি টানা ২ সপ্তাহ করবেন এবং দ্বিতীয় কাজটি টানা ২ সপ্তাহ করবেন। আশাকরি ১ মাস পর আপনি আপনার জন্য বেস্ট কাজটি খুজে পেতে সক্ষম হবেন। যার নিয়ে সামনে এগুলে আপনি ভাল করতে পারবেন এই সেক্টরে। আমি এই পদ্ধতিতে কাজ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনাকে এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, আপনার জন্য উত্তম এমন একটি কাজ খুজে বের করতে একটু সময় দিন এবং নিজে বের করুন।

৪। সময় নিয়ে কাজ শিখুনঃ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সময় নিয়ে কাজ শেখা। কাজ নির্বাচনে আপনার একটু ভুলত্রুটি হলেও আপনি যদি সময় নিয়ে মন দিয়ে কাজ শিখতে পারেন তাহলে সেটা হবে আপনার সেরা প্রাপ্তি যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এ সফল করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। অনেকেই কাজ না শিখে প্রথমেই প্রোফাইল খুলে কাজে আবেদন করা শুরু করে এবং কিছুদিন পর কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায় চমৎকার এই পেশা থেকে।

একটা কথা মনে রাখবেন আপনি যদি কোন একটি কাজে দক্ষ হন তাহলে অনলাইন থেকে টাকা আয় করার অনেক গুলো উপায় রয়েছে। ভুলেও কাজ না শিখে এই পেশায় আসবেন না তাহলে ধরে নিন আপনি তেমন কিছুই করতে পারবেন না। এবং বিশেষ করে বর্তমান সময়ে (২০১৯ সালে) এই সেক্টর দিন দিন কঠিণ হচ্ছে।

৫। সফল একজন ফ্রিল্যান্সার এর অধীনে কিছু দিন কাজ করুনঃ
আপনার যদি এমন কোন সুযোগ থাকে তাহলে কোন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এর অধীনে থেকে কাজ শিখুন। কেননা উনি আপনাকে বর্তামান মার্কেটে যে কাজের বেশি চাহিদা এমন সব কাজ আপনাকে শেখাবে। যদিও যারা ফ্রিল্যান্সিং করে সফল তারা একটু ব্যাস্ত থাকে কাজ নিয়ে কিন্তু আমি দেখেছি উনারা অনেক সময় নতুনদের সুযোগ দিয়ে থাকেন। অনেকের আবার রয়েছে নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার। তবে কিছু ট্রেনিং সেন্টার থেকে দূরে থাকবেন যারা শুধুমাত্র ট্রেনিং দিয়ে টাকা আয়ের জন্য বসেছে এবং যাদের দক্ষ্য ট্রেইনার নেই।

৬। মার্কেটপ্লেস নিয়ে স্টাডি করুনঃ
যদিও এই সময়ের মধ্যে আপনার মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও আরেকটু স্টাডি করুন আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস দিয়ে শুরু করলে আপনি দ্রুত কাজ পেতে পারেন। পরামর্শ নিতে পারেন সফলদের কাজ থেকে। একটু আপনি যত দ্রুত কাজ পাবেন ফ্রিল্যান্সিং এ তত দ্রুত ভাল লাগা তৈরী হবে। প্রথমে একটি মার্কেটপ্লেস বাছাই করুন যেখানে আপনি শুরু করতে চান।

৭। প্রোফাইল খুলুনঃ
এই পর্যায়ে আপনার নির্বাচিত মার্কেটপ্লেসে একটি প্রোফাইল খুলুন। এটা খুব সহজ কাজ অন্যান্য ওয়েব সাইটে একটি আকাউন্ট খোলার মতই। তবে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হল সুন্দর করে প্রোফাইলটি সাজানো। খুব সুন্দর একটি হাসি দিয়ে একটি ছবি তুলুন এবং সেটি আপনার প্রোফাইল পিকচার হিসেবে দিন। ভাল ভাবে প্রোফাইল ওভারভিউ লিখুন এবং কাজের পোর্টফোলিও যোগ করুন। এছাড়া আরো অনেক কিছু রয়েছে যা মার্কেটপ্লেস অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। আপনি সেগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আর যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন, এমনকি ইউটিউবে খুজে দেখতে পারেন ঐ বিষয়ে কোন টিউটরিয়াল পাওয়া যায় কিনা।

৮। আবেদন করুন কাজেঃ
এতদূর আসার পর আপনাকে একটি কাজ এনে দিতে পারে একটি আবেদন পত্র বা কাভার লেটার। ক্লাইন্ট আপনাকে মূলত কাভার লেটার দেখেই ইন্টারভিউতে ডাকতে পারে। শুধুমাত্র সেই কাজে আবেদন করবেন যে কাজ আপনি দারুনভাবে করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। তাই বেছে বেছে কাজে আবেদন করুন এবং ধৈর্য্যধারন করুন। কেউ হয়ত খুব সহজেই একটী কাজ পেয়ে যায় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে একটু সময় লাগে। বিশ্বাস রাখুন আপনিও কাজ পাবেন যদি আপনার সবকিছু ঠিক থাকে।

৯। সঠিক সময়ে কাজ জমা দিনঃ
কাজ পাওয়ার পর ক্লাইন্ট আপনাকে কাজ জমা দেয়ার একটি সময় বলে দেবে যাকে ডেডলাইন বলা হয়। আপনি কাজটি সেই সময়ের আগেই জমা দেবেন বা সেই সময়ের মধ্যে। তবে লেইট করা যাবে না। সবকিছু ঠিক থাকলে কাজ বুঝে নিয়ে ক্লাইন্ট আপনাকে পেমেন্ট করে দেবে। যখন কাজের পারিশ্রমিক পাবেন আপনার মাঝে একটা অন্যরকম অনুভুতি কাজ করবে সেটা ১ ডলার হউক আর ১০০ ডলার হউক। আপনার প্রথম উপার্জন অনলাইন থেকে!

১০। যোগাযোগ ঠিক রাখুন:
কাজ চলাকালিন সময় ক্লাইন্টের সাথে যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমরা স্কাইপ (স্কাইপ) ব্যবহার করে থাকি যা অধিকাংশ ক্লাইন্টদের থাকে। স্কাইপে এক্টিভ থাকুন এবং যেকোন প্রয়োজনে ক্লাইন্ট কে নক করুন, ইমেইল করুন। তারা যোগাযোগটাকে অনেক বেশি পছন্দ করে তবে সেটা যেন শুধু গল্প না হয়, কাজের বিষয়ে আপনি যত কন্টাক্ট করবেন ততই ভাল হবে। এক্ষেত্রে তারা বিরক্তবোধ খুব কম ক্লাইন্টেই করে থাকে।

১১। সততার সাথে কাজ চালিয়ে যানঃ
আপনার একটি সুন্দর যাত্রা শুরু হয়েছে যা সততার সাথে কাজ করে গেলে আপনিও হয়ে উঠবেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। সময়, শ্রম, মেধা আর সততা সাথে থাকলে আপনি নিজেকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারবেন যা হয়ত আপনি কল্পনাও করতেন না একসময়।

আমার বিশ্বাস কেউ যদি এভাবে ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা শুরু করে তার সফলতা অতি নিকটে। আপনার ফ্রিল্যান্সিং যার্নি অনেক সুন্দর হইক এবং কাজ করে নিজের, পরিবারের এবং দেশের উন্নয়ন বয়ে আনুন। ভাল থাকবেন সবসময়।

Create a WordPress custom post type without plugin

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Press ESC to close